বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
শিল্পী কৃষ্ণা তিথি ও শিল্পী শাহ মাহবুবের পর রোববার অনুষ্ঠিত হল নিউইয়র্কের জনপ্রিয় শিল্পী রোকসানা মির্জার একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। শো টাইম মিউজিক ধারাবাহিকভাবে এই একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।
এরপর হলভর্তি দর্শক-শ্রোতার করতালিতে গান গাইতে স্টেজে আসেন নিউইয়র্কের সুদর্শনা জনপ্রিয় শিল্পী রোকসানা মির্জা। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের স্কুল খোলার বাস্তবতাকে সামনে রেখেও অভিভাবকরা তাঁর গান শুনতে এসেছেন, এতে যারপরনাই খুশী এই গুণী শিল্পী। তিনি বলেন, আপনাদের এই ভালবাসায় আমি মুগ্ধ, আমি কৃতজ্ঞ। আমার গান শোনার পর আপনাদের ভাল লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে গঠনমুলক সমালোচনাকে আমি আমার জীবন পথের পাথেয় মনে করব।
> শিল্পী নিউইয়র্কে থাকেন, কিন্তু বাংলাদেশকে অনুভব করেন প্রতি ক্ষণে, প্রতি মুহুর্তে। তাই দেশের গান দিয়েই শুরু করেন তাঁর পরিবেশনা। ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাওনা’ গানটি দিয়ে যখন শুরু করেন তরুন প্রজন্মের এই শিল্পী রোকসানা মির্জা তখন বাংলাদেশী আমেরিকানদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় গানটির সুরে। কারণ দেশে বেসরকারী চ্যানেলগুলো চালু হওয়ার আগে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বিটিভি’র সংবাদের আগে এই গান প্রতিদিন শুনতে পেতেন। সে সময়ে বিটিভি ছিল মানুষের সংবাদ জানা ও বিনোদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
শিল্পী তাঁর পরিবেশনায় দুই বাংলার বরেণ্য শিল্পী যারা প্রয়াত হয়েছেন, যারা বাংলা গানকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়, তাদের গানগুলো গেয়ে একদিকে দর্শকদের যেমন আনন্দ দিয়েছেন, তেমনি নিয়ে গেছেন হারানো দিনের স্মৃতিময় দিনগুলোতে। রোকসানা মির্জা একে একে গাইলেন প্রয়াত শিল্পী সুবীর নন্দী, এন্ড্রো কিশোর, ওপার ভূপেন হাজারিকার গান।
প্রয়াত শিল্পী ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ গানটি গেয়ে রোকসানা বলেন, করোনা মহামারীতে এত মানুষের জীবনহানি, মানুষের বিভিন্ন কষ্টের মধ্যেও একটি ব্যাপার প্রমাণ হয়েছে, মানুষই মানুষের পাশে ছিল। পিনপতন নিরবতায় শিল্পীর মুখে মানুষের মানবিকতার কথায় কিছুটা সময় উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা ছিলেন অন্য এক ভূবনে।
হারানো দিনের গান প্রাধান্য দিলেও তাঁর পরিবেশনায় ছিল আধুনিক,আর ফোন গানও। গাইলেন বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় গান। সব মিলিয়ে গাইলেন কুড়ির অধিক গান।
‘কি জাদু করিলা, পিরিতি শিখাইলা - থাকিতে পারিনা ঘরেতে’
গানটির মাধ্যমে শিল্পী রোকসানা মির্জা শেষ করলেন তাঁর একক সঙ্গীতুষ্ঠান। আর সেই সঙ্গে কুইন্স প্যালেসের হলভর্তি দর্শক দাঁড়িয়ে করতালিতে, ভালবাসায় সিক্ত করলেন তাদের প্রিয় শিল্পীকে।
উল্লেখ্য,শিল্পী রোকসানা মির্জা ঢাকার বাড্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে সঙ্গীতে হাতেখড়ি এই শিল্পীর। তাঁর প্রথম ওস্তাদ খোকন চক্রবর্তী। ২০০৯ সাল থেকে দেশের বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে শুরু করেন রোকসানা মির্জা। যুক্তরাষ্ট্রসহ এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২টি দেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেন নিউইয়র্কের জনপ্রিয় এই শিল্পী।
সঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এওয়ার্ড বা সম্মাননা পেয়েছেন এই গুণী শিল্পী। ২০০৭ সালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র আয়োজিত সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গানে প্রথম, ২০১৬ সালে জ্যামিনি ও এনআরবি এওয়ার্ড, ২০১৭ সালে ঢালিউড এওয়ার্ড লাভ এই প্রতিভাবান শিল্পী।
শাহ ফারুক রহমান
এডিটর, বিডিইয়র্ক, নিউইয়র্ক।